ঘটনা-১
১৯৫৩
ও ১৯৫৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ের কোনো একদিন। উত্তর প্রদেশের মোগলসরাইয়ে রেল বিভাগের একটা
অনুষ্ঠান চলছে। রামদুলারি দেবী নামের এক বৃদ্ধা এসে নিরাপত্তাকর্মীদের বললেন, তাঁর
ছেলে রেলে চাকরি করেন। ছেলেটির এখানে থাকার কথা। তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চান। একজন
নিরাপত্তাকর্মী বললেন, ‘মাইজি, আপকা বেটা কা নাম কেয়া হ্যায়?’ বৃদ্ধা বললেন, ‘লাল।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।’ তাঁর কথায় নিরাপত্তাকর্মীরা অবিশ্বাসের সুরে হেসে ফেললেন। কারণ,
এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির নাম লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। তিনি ভারতের রেলমন্ত্রী (তিনি
১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভারতের রেলমন্ত্রী ছিলেন। পরে দেশটির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী
হয়েছিলেন)। তাঁরা প্রথমে ভাবলেন, এই বুড়ি পাগল। কিন্তু পরে তাঁর আত্মবিশ্বাসী অভিব্যক্তি
আর সাবলীল কথা শুনে নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে লাল বাহাদুরের কাছে নিয়ে গেলেন। লাল বাহাদুর
ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে বৃদ্ধাকে প্রণাম করলেন। তিনি সবাইকে জানালেন, বৃদ্ধা সত্যিই তাঁর
মা। তিনি মায়ের সঙ্গে আলাদা করে কিছুক্ষণ কথা বললেন এবং লোকজনকে দিয়ে মাকে বাসায় পাঠিয়ে
দিলেন। এরপর তিনি বক্তব্য দিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকেরা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি আপনার মায়ের সামনে বক্তব্য দিলেন না কেন?’
রেলমন্ত্রী বললেন, ‘আমি যে একজন মন্ত্রী, সে কথা মাকে জানাইনি। তিনি জানেন, আমি রেলের
ছোটখাটো একজন কর্মচারী। মা যদি জানতে পারেন, আমি রেলমন্ত্রী, তাহলে নানাজনের জন্য সুপারিশ
নিয়ে আসবেন। তখন মহাবিপদে পড়ব। তাঁর কথা আমি মানতেও পারব না, আবার মাতৃ–আজ্ঞা ফেলতেও
পারব না।’
ঘটনা-২
সারা জীবনে একটা বাড়ি করতে না পারার কারণে ‘হোমলেস মিনিস্টার’ পরিচিতি পাওয়া লাল বাহাদুর
শাস্ত্রীর ছেলে সুনীল শাস্ত্রী (কংগ্রেস নেতা ও উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারের সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী)
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী: পাস্ট ফরোয়ার্ড শিরোনামে একটি বই লিখেছিলেন। বইয়ে তিনি বলেছেন,
‘বাবুজি রেলমন্ত্রী হওয়ার পর সরকার থেকে একটি শেভরোলেট ইম্পালা গাড়ি দেওয়া হয়েছিল।
একদিন আমি বাবুজির পারসোনাল সেক্রেটারিকে বললাম, তিনি যেন ড্রাইভারকে আমাদের বাসায়
গাড়িটা নিয়ে আসতে বলেন। ড্রাইভার আসার পর আমরা গাড়িটা নিয়ে ঘুরতে গেলাম। পরের দিন বাবুজি
ড্রাইভারকে বললেন, “তুমি কি লগবুকে গাড়ি কখন কতটুকু চালাও তা টুকে রাখো?” ড্রাইভার
হ্যাঁ–সূচক মাথা নাড়লেন। গতকাল আমরা কতটুকু পথ চালিয়েছিলাম, তা বাবুজি তাঁকে জানাতে
বললেন। ড্রাইভার জানালেন, ১৪ কিলোমিটার। তখন বাবুজি আম্মাকে বললেন, ১৪ কিলোমিটার ব্যক্তিগত
প্রয়োজনে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের জন্য তার খরচ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। তিনি টাকাটা
আম্মাকে প্রাইভেট সেক্রেটারির হাতে দিয়ে দিতে বললেন।’
No comments:
Post a Comment