Wednesday, May 7, 2025

কাবার দরজায় কী লেখা আছে

 

কাবার দরজার গিলাফে আরবি অক্ষরে কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন তসবি খচিত রয়েছে। ক্যালিগ্রাফিখচিত হওয়ায় কেউ কেউ এই লেখাগুলো বুঝতে পারেন না। অনেকের জানার আগ্রহ, কী লেখা রয়েছে পবিত্র কাবার দরজায়। আয়াতগুলো হলো—

সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৩৩

‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। তোমরা প্রতিযোগিতা করো তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য, যা আকাশ ও পৃথিবীর সমান প্রশস্ত, যা সাবধানীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’

সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪

‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। আমি লক্ষ করি, তুমি আকাশের দিকে বারবার তাকাও। তাই তোমাকে এমন এক কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ করবে। সুতরাং তুমি মসজিদুল হারামের (কাবা) দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, কাবার দিকে মুখ ফেরাও। আর কিতাব দেওয়া হয়েছে যাদের, তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে এ তাদের প্রতিপালক-প্রেরিত সত্য। তারা যা করে, তা আল্লাহর অজানা নেই।’


সুরা ফাতহ, আয়াত: ২৭

‘পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। আল্লাহ তাঁর রাসুলের স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে নিরাপদে প্রবেশ করবে, কেউ-কেউ মুণ্ডিত মাথায়, কেউ-কেউ চুল কেটে। তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না। আল্লাহ জানেন তোমরা যা জানো না। এ ছাড়া তিনি তোমাদের দিয়েছেন এক আসন্ন বিজয়।’

সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫ (আয়াতুল কুরসি)

‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, অনাদি। তাঁকে না তন্দ্রা স্পর্শ করে, না নিদ্রা। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের (মানুষের) সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে, তিনি তা জানেন। তিনি যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। আকাশ ও পৃথিবীব্যাপী তাঁর আসন আর তাদের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি অত্যুচ্চ মহামহিম।’

সুরা ইখলাস

‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। বলো, তিনি আল্লাহ (যিনি) অদ্বিতীয়। আল্লাহ সবার নির্ভরস্থল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি ও তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’

সুরা ফাতহ, আয়াত: ২৯

‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। তাঁর সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর আর নিজেরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় নমিত দেখবে। তাদের মুখের ওপর সিজদার চিহ্ন থাকবে। তাদের সম্বন্ধে এ রূপ বর্ণনা রয়েছে তাওরাত আর ইঞ্জিলেও। তাদের উপমা একটি চারাগাছ, যা থেকে কিশলয় গজায়, তারপর তা দৃঢ় ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের ওপর শক্ত হয়ে দাঁড়ায়, চাষিকে আনন্দ দেয়। এভাবে আল্লাহ বিশ্বাসীদের উন্নতি করে কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।’

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি সত্য প্রতিপালক ও প্রকাশ্য সত্য। মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, তিনি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।

 

সুরা কুরাইশ

পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। কুরাইশদের সংহতির জন্য, শীত ও গ্রীষ্মের সফরে তাদের সংহতির জন্য, তাদের উপাসনা করা উচিত এই (কাবা) গৃহের প্রতিপালকের, যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় খাদ্য দান করেছেন এবং নিরাপত্তা দান করেছেন ভয়ভীতি থেকে।

তসবি

ওপরে, মধ্যখানে ও নীচে থাকা গোলাকৃতির ছয়টি বক্সে লেখা আছে, ‘রাব্বি আল্লাহ’; যার অর্থ: আল্লাহ আমার পালনকর্তা। চার জায়গায় লেখা আছে, ‘হাসবি আল্লাহ’; যার অর্থ: আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট।

মক্কায় প্রস্তুত বর্তমান গিলাফটি কাবা শরিফের জন্য উপহার প্রদান করেছেন সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আলে সৌদ। তাকে বলা হয়, খাদেমুল হারামাইন আশ-শারিফাইন, অর্থাৎ, মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের সেবক তিনি।

 source: https://www.prothomalo.com/religion/islam/ugvpl2o26p

কাবা শরিফ মার্বেল পাথরের অপূর্ব কাহিনি

 

যাঁরা ওমরাহ বা হজ পালন করতে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন, কাবা শরিফের মাতাফ (যেখানে তাওয়াফ করা হয়) খোলা আকাশের নিচে। প্রচণ্ড রোদে যখন চামড়া পুড়ে যাওয়ার জোগাড়, সে মুহূর্তে তাওয়াফ করতে গেলে পায়ে কোনো কষ্ট অনুভূত হয় না, বরং পায়ের পাতায় বেশ প্রশান্তির অনুভূতি হয়।

হারামাইন (মক্কা-মদিনা) সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ভার দেওয়া হয়েছিল মিশরীয় স্থপতি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইলের ওপর। তিনি চেয়েছিলেন, তাওয়াফকারীদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার জন্য মসজিদুল হারামের মেঝে এমন কোনো মার্বেল পাথরে ঢেকে দিতে, যার বিশেষ তাপ শোষণের ক্ষমতা আছে। অনেক গবেষণার পর এ রকম মার্বেল পাথরের সন্ধান পাওয়া যায় গ্রিসের ছোট্ট একটি পাহাড়ে। আর কোথাও সে মার্বেলের ভালো মজুত পাওয়া যায়নি।

স্থপতি কামাল ইসমাইল গ্রিসে গিয়ে মার্বেল কেনার চুক্তি সই করেন। সাদা মার্বেলের মজুত চলে এলে সেগুলো দিয়ে বিশেষ নকশায় মসজিদুল হারামের মেঝে গড়ে তোলা হয়। এই ঘটনার ১৫ বছর পর সৌদি সরকার কামাল ইসমাইলকে আবারও ডেকে মদিনার মসজিদে নববির চারপাশের চত্বরও একইভাবে সাদা মার্বেল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দায়িত্ব নেন।

ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আবার গ্রিসে গেলেন। তাঁর জানা ছিল না, সেই মার্বেল পাথর আর আছে কি না। গ্রিসে গিয়ে জানতে পারেন, ১৫ বছর আগে পাহাড়টির বাকি পাথর বিক্রি হয়ে গেছে।

বিমর্ষ কামাল ইসমাইল এ কথা শুনে হাতে থাকা কফি পর্যন্ত শেষ করতে পারেননি। পরের ফ্লাইটে তিনি মক্কায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ফিরে আসার আগে বাকি মার্বেল পাথরের ক্রেতার নাম-ঠিকানা জানতে চান। তাঁকে বলা হয়, ১৫ বছর আগের লেনদেনের তথ্য বের করতে সময় লাগবে। পেলে জানানো হবে।

 

পরদিন তাঁকে জানানো হলো, ক্রেতার নাম-ঠিকানা খুঁজে পাওয়া গেছে। নিরাশ মনে আবার সেই অফিসের দিকে তিনি যাত্রা করেন। ঠিকানা হাতে পেয়ে তাঁর হৃৎকম্পন বেড়ে যায়। কেননা কাগজের তথ্য অনুযায়ী ক্রেতা এক সৌদি কোম্পানি।

স্থপতি কামাল ইসমাইল সেদিনই সৌদি আরবে ফিরে যান। ক্রেতা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে জানতে চান, ১৫ বছর আগে গ্রিস থেকে কেনা সেই মার্বেল পাথর দিয়ে তাঁরা কী করেছেন। ভদ্রলোক প্রথমে সহসা কিছুই মনে করতে পারলেন না। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, সেই সাদা মার্বেলের পুরো আমদানিটাই পড়ে আছে। কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।

এ তথ্য শুনে কামাল ইসমাইলের চোখ থেকে শিশুর মতো অশ্রু ঝরতে শুরু করল। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভদ্রলোক তাঁর কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বললেন।

পরে ড. কামাল ওই কোম্পানিকে সৌদি সরকারের পক্ষে একটি চেক দিয়ে তাতে ইচ্ছেমতো অঙ্ক বসিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু কোম্পানির মালিক যখন জানলেন, এই সাদা মার্বেল পাথর মসজিদে নববির চত্বরে বসানো হবে, তখন তিনি চেক নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে দিয়ে এটা কিনিয়েছিলেন, আবার তিনিই আমাকে এর কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন।’ সেই মার্বেল পাথর রাসুল (সা.)–এর মসজিদের উদ্দেশ্যে এসেছিল। সেই সাদা পাথর দিয়ে মসজিদে নববির চত্বরও মুড়ে দেওয়া হয়।

 

স্থপতি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল (১৯০৮-২০০৮) ইসলামি স্থাপত্যে তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি করেছেন। শতবর্ষী এই স্থপতি তাঁর কর্মজীবনের প্রায় পুরোটা সময় মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেননি। সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং বিন লাদেন গ্রুপের সুপারিশ কাজে আসেনি। অবলীলায় তাঁদের মোটা অঙ্কের চেক ফিরিয়ে দেন।

তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘এ দুই পবিত্র মসজিদের কাজের জন্য পারিশ্রমিক নিয়ে শেষবিচারের দিনে আমি কোন মুখে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াব?’

 

source:  https://www.prothomalo.com/religion/islam/jvx3dchqz1

কাবার দরজায় কী লেখা আছে

  কাবার দরজার গিলাফে আরবি অক্ষরে কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন তসবি খচিত রয়েছে। ক্যালিগ্রাফিখচিত হওয়ায় কেউ কেউ এই লেখাগুলো বুঝতে পারেন না। অনেকের জ...